রাজনৈতিক কারণে সংবাদকর্মীদেরকে প্রাণ দিতে হয়েছে : ফখরুল

প্রথম সময় ডেস্ক: রাজনৈতিক কারণে অনেক সংবাদকর্মীদেরকে নিগৃহীত হতে হয়েছে এবং প্রাণ দিতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

“কর্মের গৌরবে প্রাণের সৌরভে, বিপুল শক্তি একসাথে শতপ্রাণে” স্লোগানে শুরু হয়েছে পেশাদার সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) রজতজয়ন্তী উৎসব। বৃহস্পতিবার সকালে ডিআরইউ চত্বরে এ উপলক্ষে আয়োজিত ‘শোভাযাত্রা’ উদ্বোধনকালে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

এর আগে গত ২৫ অক্টোবর রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্র্যান্ড বলরুমে চার দিনব্যাপী এই রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার নানা আয়োজনে পালিত হবে ডিআরইউর রজতজয়ন্তী উৎসব।

শোভাযাত্রায় দেশে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে গণমাধ্যম সক্ষম মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, যে দেশের গণমাধ্যম যত স্বাধীন ও শক্তিশালী, সেই দেশের গণতন্ত্র তত বেশি শক্তিশালী। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আজকে সারাবিশ্বে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপরে একটা চাপ সৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সেই চাপ অনেক বেশি আমরা লক্ষ্য করছি। আমরা দেখেছি, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে অনেক সংবাদকর্মীকে নিগৃহীত হতে হয়েছে এবং প্রাণ দিতে হয়েছে। তাদেরকে অনেক সময় কারাগারে যেতে হয়েছে। এমনকি সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দেশে গণতন্ত্র এখন প্রায় অনুপস্থিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখানে মানুষের স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংসদীয় গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এসেছি।

শোভাযাত্রায় ডিআরইউ দেশের বর্তমান পেক্ষাপটে একটি ব্যতিক্রমী সংগঠন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এটা সংবাদকর্মীদের নিজস্ব সংগঠন এবং এখানে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে নিজেদেরকে ডুবিয়ে দেয়নি।

“তারা গত ২৫ বছর ধরে পেশাদার সংগঠন হিসেবে নিজেদের ঐক্যকে ধরে রাখতে পেরেছেন। এজন্য তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি”

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে বিভাজনের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যার কুফল সর্বক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি। যার ফলে সমাজ বিভক্ত ও মানুষ বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য সুখকর বিষয় নয়। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আনন্দময় নয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি যেভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা আমাদের জন্য আশার একটা আলো দেখায়।

গণমাধ্যমের জন্য আইনগুলো প্রসঙ্গান্তর মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা মনে করি, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে আইনগুলো করা হয় এগুলো গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য কখনো উপযোগী নয়। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশে গণমাধ্যম মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভিন্নমতকে সহ্য করার যে সহনশীলতা, সেটা ধীরে ধীরে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে লজ্জার সঙ্গে একটা খবর লক্ষ্য করলাম পত্রিকায় এসেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের ১০জন সদস্য তাদের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছে যে, বাংলাদেশের একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৪০০ মানুষ বিনা বিচারে নিহত হয়েছে। তা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটা স্যাংশন দেওয়ার অনুরোধ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে। আমাদের দুঃখ হয়, আজকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার পেক্ষিতে এই বিষয়গুলো আজকে বিদেশের কাছে যাচ্ছে, বিশ্ব সভার কাছে যাচ্ছে। যা আমাদের জন্য কখনোই সুখকর বিষয় নয়।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্যদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, যখন একদিকে কোভিড-১৯ সারাবিশ্বকে গ্রাস করে ফেলেছে এবং মানবসভ্যতাকে বাধাপ্রদান করছে; সেই সময়ে তারা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ফ্রন্ট লাইনার হিসেবে কাজ করছেন। এসময় অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন, আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও মাগফিরাত কামনা করছি।

এসময় ডিআরইউ প্রতিষ্ঠার ২৫বছরে রজত জয়ন্তী উপলক্ষ্যে র‌্যালির উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। শোভাযাত্রায় ডিআরইউর সাবেক সভাপতি এবং রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও বিডি জার্নালের সম্পাদক শাহজাহান সরদার উপস্থিত ছিলেন।

ডিআরইউর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ইলিয়াস হোসেন, ডিআরইউর সিনিয়র সদস্য শাহনেওয়াজ দুলাল, নজরুল ইসলাম মিঠু, মনিরুল ইসলাম, সাহাবউদ্দিন চৌধুরী, মশিউর রহমান, রাশেদুল হক, ডিআরইউর বর্তমান কমিটির দপ্তর সম্পাদক জাফর ইকবাল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুর রহমান রুবেল, কল্যাণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শোভাযাত্রা শেষে সকাল ১১টায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সংকট ও সম্ভাবনা: বর্তমান প্রেক্ষিত ‘শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হবে। ডিআরইউর সাবেক সভাপতি এবং রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও বিডি জার্নালের সম্পাদক শাহজাহান সরদারের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

পরে “নারী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ” ও “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের আইন” শীর্ষক দুটি সেমিনার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।

অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় একই ভেন্যুতে Reporters Challenge : Real News Verses Fake News’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু-ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

এছাড়া সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে Reporters Across The Globe শীর্ষক এক ভার্চুয়াল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে।

আগামী শনিবার সকালে মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে ডিআরইউর সাবেক সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বনাম বর্তমান কমিটির মধ্যে এক প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। পরে নারী সদস্যদের স্ট্যাম্প ভাঙ্গা এবং সাবেক সভাপতিদের স্ট্যাম্প ভাঙ্গা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

দুপুর ১২টায় ডিআরইউ নসরুল হামিদ মিলনায়তনে উদ্বোধন হবে ৫টি প্রদর্শনী স্টল। এছাড়া বিকালে শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে ডিআরইউর সাবেক কর্মকর্তা ও সদস্যদের সম্মাননা প্রদান এবং সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *