বিশেষ প্রতিনিধিঃ খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর ভাতৃবধু, প্রধানমন্ত্রীর চাচী প্রয়াত শেখ রাজিয়া নাসেরের কবর জেয়ারত করতে শুক্রবারে রাজধানীর বনানীতে আসছেন। জানা গেছে, দলের জেলা কমিটির এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই চুড়ান্ত হয়েছে। কবর জেয়ারতের এই অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন দলের জেলা শাখার সভাপতি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুন অর রশিদ।
দলের সূত্রগুলি জানায়, বঙ্গবন্ধুর আপন সহোদর ৭৫ এর ১৫ ই আগস্টে নিহত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসেরের স্ত্রী, রাজিয়া নাসের প্রধানমন্ত্রীর চাচী, খুলনা তথা দক্ষিণবঙ্গের রাজনৈতিক অভিভাবক শেখ হেলাল এমপি, খুলনা সদর আসনের এমপি শেখ জুয়েল ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের পরিচালক শেখ সোহেলের আম্মা রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা গেলে খুলনা থেকে দলের শত শত নেতা কর্মী মনের টানে নিজ নিজ তাগিদে শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা চলে আসেন।
প্রয়াত শেখ রাজিয়া নাসের খুলনার আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের কাছে প্রিয় চাচী হিসাবে সমাদৃত ছিলেন।খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সাবেক মেয়র কাজি আমিনুল হক, সাবেক এমপি আলহাজ্জ মিজানুর রহমান মিজান, খুলনার ৬ টি আসনের এমপিগণ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাসসহ দলের বিপুল সংখ্যক নেতা কর্মীরা এসে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান, দিনভর ঢাকা থেকে তাকে কবরে শুইয়ে দিয়ে মাটি দেয়া পর্যন্ত নেতা কর্মীদের সাবলীল উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু এই জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানে জেলা আওমালীগের দুই শীর্ষনেতাসহ একটি অংশের অনুপস্থিতি ছিল দেখার মতো। বিষয়টি গনমাধ্যমে আসলে খুলনা ও আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়।
এর পরপরই জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাড সুজিত অধিকারী নিজ ঘরানার নেতা কর্মীদের দিয়ে ফেস বুকে নিজেকে করোনা আক্রান্ত অসুস্থ দাবি করে স্টাটাস দেন। যদিও তার প্রতিপক্ষের দাবি, এটি ছিল তার রাজনৈতিক অসুস্থতা। তাদের দাবিমতে, এর পরে তিনি কোর্ট, নিজের চেম্বার ও দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সক্রিয় ছিলেন।
এমন দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাড সুজিত অধিকারী সোমবার এই প্রতিবেদককে বলেছেন, আমার অসুস্থতা নিয়ে যারা পরিহাস করছেন তাদের ব্যাপারে কথা বলতেও আমার ঘৃণা হয়, তারা অত্যন্ত ন্যারো মাইন্ডের।
আলাপকালে অ্যাড সুজিত বলেন, চাচী আমাদের শ্রদ্ধাভাজন, সবার মুরুব্বী। যেতে পারিনি, সেটা স্বীকার করতে সমস্যা কোথায় কিন্তু তার জন্য মিথ্যা অসুস্থ্যতার ভান ধরব কেন? মিথ্যা বলব কেন ?
অন্য দিকে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে সামগ্রিক ঘটনায় নীরব ছিলেন। নীরব থাকাকে শ্রেয় মনে করেছেন।তবে তার রাজনৈতিক সহযোগী, জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল জানিয়েছেন, চাচীর দাফনে অংশ না নেয়াটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক ছিল। বিষয়টি ইনটেনশনালি কিছুই করা হয়নি, স্রেফ কমিউনিকেশন গ্যাপের জন্য এমনটি হয়েছে।
সাবেক যুবনেতা জামাল আরও জানান, চাচী মারা যাবার আগের দিন আমরা সবাই যুবলীগের প্রোগ্রামে গোপালগঞ্জে ছিলাম।খুলনা ব্যাক করে আসতে আসতে রাত হয়ে গেছিল। বিমানের টিকিট যেমন পাইনি তেমনি সবাইকে নিয়ে গুছিয়ে রওনা দিলে আমরা এসে জানাজা পেতাম না।
দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, তেরখাদা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু জানান, আমরা যাইনি বা যেতে পারিনি এটা আমাদেরই ভুল, পরবর্তীতে আমরা সব সময়ের জন্য সতর্ক থাকবো। এমন মিসটেক আমাদের করা উচিত হয়নি।এর মধ্যেই আমরা জেলা শাখার পক্ষ থেকে মিলাদ মাহফিল করেছি, জেলার আওতায় সব থানাতেই দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে।
খুলনা- ৬ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের বিদায়ী সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান বাবু প্রয়াত রাজিয়া নাসেরের জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানে জেলার নেতা বা তার অনুসারীদের আসার বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা পোষণ করে বলেছেন, তারা কেন আসেননি সেটা একান্তই তাদের ব্যাপার। বাবু এর বাইরে আর কোনও কথা বলতে চান নি।
জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির ববি জানান, দলে এক নায়কতন্ত্র চলছে। পুরনাংগ কমিটি থাকলে এমনটি হতো না। নেতা যায়নি বলে অন্যরা যায়নি বা যাবে না যদি এমনটি হয়ে থাকে সেটি হবে খুব দুঃখজনক। প্রয়াত চাচী রাজিয়া নাসের ছিলেন সব কিছুর উর্ধ্বে। সাবেক এই ছাত্রনেতা জানান, দলের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক এমন ভুল করবেন বলে মনে হয় না। মেবি এটা মিস্টেক হয়ে গেছে তাদের।