বিশেষ প্রতিনিধিঃ খুলনা থেকে ফিরে, খুলনা সড়ক বিভাগের ডুমুরিয়া উপজেলাতে শাহপুর- ফুলতলা অংশে নির্মাণাধীন কাজে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বালিশ কেলেংকারির চেয়েও এই দুর্নীতি আরও ভয়াবহ। সেখানে নওগাঁর এক ঠিকাদারের নামে কাজ দেয়া দৃশ্যমান, কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, স্বয়ং অফিস নিজেরাই তাদের নিজস্ব লোকজন দিয়ে এই কাজ তুলছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে, এই সংস্কার কাজে আদতেই শিডিউলের ১০০ ভাগের ১০ ভাগ কাজও করা হচ্ছে না।
জানা গেছে, শিডিউল না মেনে কাজ করার দরুন স্থানীয় লোকজন ক্ষুদ্ধ হয়ে গত শুক্রবার কাজ বন্ধ করে দেয় কিন্তু পরে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার ছোট চাচার কারণে গত রোববার থেকে সেই কাজ আবার শুরু হয়। অন্যদিকে, কাজের জন্য মনোনীত ঠিকাদার মনির উদ্দিন তার লাইসেন্স নিয়ে অফিস কাজ করছে এমন কথা স্বীকার করে বলেছেন, অফিসের চাপে আমি লাইসেন্স দিতে বাধ্য হয়েছি তবে কাজের কোয়ালিটি প্রসঙ্গে নওগাঁতে অবস্থানরত ঠিকাদার জানান, ওরা কিভাবে কাজ করছে সেটা আমি জানি না। অন্যদিকে, সড়ক বিভাগ খুলনা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, তিনি ঢাকা অবস্থান করছেন, ঢাকা থেকে খুলনা গিয়েই তিনি খোঁজ নেবেন।
শনিবার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই প্রতিবেদককে বারবার তার অফিসে গিয়ে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান।
জানা গেছে, ডুমুরিয়ার সাহাপুর টু ফিলতলা অংশে প্রায় সোয়া কিলো রাস্তার জন্য কাজের টেন্ডার হলে নওগাঁর বাসিন্দা ঠিকাদার মনির অফিসিয়ালি এই কাজ পান। কিন্তু পরে এই কাজ মনিরের বদলে সেখানে আমির নামে জনৈক ব্যক্তি এই কাজ করতেছেন। আমির অফিশিয়ালি এই কাজ পান নি আর তার লাইসেন্সও নেই, তেমনি এই কাজ করার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাও নেই। জনশ্রুতি আছে, সেখানের সড়ক বিভাগের অধিকাংশ কাজ ঠিকাদারদের কাছ থেকে কৌশলে চাপ প্রয়োগ করে নিয়ে আমির মার্কা লোকজনদের দিয়ে অফিসের মাধ্যমে কাজ তোলা হয়, বিসয়টি ওপেন সিক্রেট। এতে প্রকৃত ঠিকাদাররা কাজ থেকে যেমন বঞ্চিত হন তেমনি কাজের মানও খারাপ হয়। কাজ থেকে ইচ্ছামতো টাকা হরিলুট করার জন্যই এখানে রক্ষকরাই ভক্ষকের ভুমিকায় নেমেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কাজ শুরু হলে শিডিউল মতে কাজ না করে তড়িঘড়ি করে ঠিকাদারের লোকজন কাজ শেষ করার জন্য মাঠে নামে। শুক্রবার স্থানীয় লোকজন কাজে অনিয়ম দেখতে পেয়ে সেখানে বাধা দিলে দ্রুত খবর পেয়ে এসডিই উপস্থিত হন। এই সময়ে স্থানীয় লোকজন তার কাছে কাজের শিডিউল দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অস্বীকার করেন ওবং বারবার ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকেম। সেই সময়ে লোকজনের চাপে পড়ে এসডিই এক পর্যায়ে বলেন এই কাজ ঠিকাদার মনিরের হলেও আমির নামে জনৈক ব্যক্তি এই কাজের সার্বিক তদারকিতে আছেন। বিক্ষুদ্ধ লোকজন এসডিইর কাছ থেকে ঠিকাদার মনিরের মোবাইল নাম্বারে লাউড স্পীকারেও কথা বলেন। মনির নিজেও সেখানকার বাসিন্দাদের ফোনে স্পষ্ট ভাষায় জানান, সেই কাজ তার নয়, তিনি নিজেও করতেছেন না।
এই সংস্কার কাজ ডুমুরিয়ার সাহাপুরে দেখতে গেলে উপস্থিত শত শত ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে ঘিরে ধরে কাজের অনিয়ম, শিডিউলের সঙ্গে কাজের অসঙ্গতি তুলে ধরেন। সাহাপুর বাজারে চায়ের দোকানে বসে আলাপকালে রঘুনাথপুরের স্থানীয় বাসিন্দা কালাম এই প্রতিবেদককে জানান, টোটাল কাজে সবটাই চুরি হচ্ছে। এসডিইর বরাত দিয়ে কালাম জানান, এই কাজে মাটি কাটার বাজেট রয়েছে শিডিউলে। কিন্তু সেখানে কোনও মাটি কাটাই হয়নি। একইভাবে রাস্তা লুজ করা হয়নি। বড় পাথর দিয়ে রাস্তা খোঁড়া হয়নি। নিচে মাটি দেয়নি। মহিলারা ঠোটে যেমন লিপস্টিক দেয় তেমনি এই রাস্তার উপর দিয়ে লিপস্টিকের মতোই সিলকডের কাজ করা হয়েছে যা একটু বর্ষা হলেই রাস্তা ধুয়ে মুছে ভেসে আগের মতোই হয়ে যাবে। শিডিউলে সিলকোড যে পরিমান দেয়ার কথা সেটাও দেয়নি এই চোরের দল। গ্রামবাসীরা বলেন, চুরিরও একটা সীমা আছে, কিন্তু আমাদের এখানে চুরির সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। রাস্তা সংস্কারের সময়ে কোনও ইঞ্জিনিয়াররাও আসেনি। ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী, নির্মাণাধীন এই সড়কের কাজ দেখতে সড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীসহ দুদক কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।