সাধারণ ছুটি দুই সপ্তাহ বাড়ানোর প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের

প্রথম সময় ডেস্ক: দেশে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এ অবস্থায় সাধারণ ছুটি সম্পূর্ণভাবে তুলে নেয়া হলে জনগণের মাঝে রোগের বিস্তার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হলে আরও দুইসপ্তাহ সাধারণ ছুটি বাড়ানোর কথা বিবেচনা করতে পারে সরকার। সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণের মাত্রা কমে এলে ধাপে ধাপে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসা যেতে পারে।

সোমবার ‘সাধারণ ছুটি-পরবর্তী স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে দেশের স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞগণ এ সব মতামত দেন। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশএই ভার্চুয়াল সংলাপটি আয়োজন করে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহবায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে সূচনা বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, চলমান অতিমারীতে নানামুখী অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হলেও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব দেখা গিয়েছে। তবে, সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি; নাগরিক সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে জনমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে, সাধারণ ছুটি পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করা যেতে পারে। সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত সংলাপে অংশ নেন।

তিনি বলেন, সরকারের ত্রাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা আরো বাড়ানো জরুরি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিমারীতে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী খুবই ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তাদের কথা মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা কার্যক্রম নিতে হবে।

ওয়াটারএইড-এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ড. মো. খায়রুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ ভার্চুয়াল সংলাপে সম্মানিত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি প্ল্যাটফর্মের কোরগ্রুপ সদস্য এবং ব্র্যাক জেমসপিগ্র্যান্ট স্কুল অব পাবিলকহেলথ-এর উপদেষ্টা ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী, সরকারের কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাালের

প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ রওশন আরা বেগম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা (সিলেট বিভাগ) ডাঃ আবু জামিল ফয়সাল, আইসিডিডিআর, বি-এর মিউকোসালইমিউনোলজি এবং ভ্যাকসিনোলজি ইউনিটের প্রধান ডাঃ ফেরদৌসী কাদরি, দুঃস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র (ডিএসকে)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. দিবালোক সিংহ, ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক ডা. মোরশেদা চৌধুরী, হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ এম এইচ চৌধুরী লেলিন এবং ডেভরেজোন্যান্স লিমিটেড-এর নির্বাহী পরিচালক স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ নাজমি সাবিনা। এছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিকপ্ল্যাটফর্মের অন্যান্য কোর গ্রুপ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং নিউ এজ গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম।

ভার্চুয়াল সংলাপের আলোচকরা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাঝে সমন্বয়ের অভাবকে অতিমারী মোকাবেলায় একটি বড় বাধা বলে চিহ্নিত করেন। সেইসঙ্গে, মাস্ক ও স্যানিটাইজারের মত স্বাস্থ্য উপকরণ বিনামূল্যে জনগণের মাঝে বিতরণের প্রস্তাব উঠে আসে। এক্ষেত্রে, বেসরকারি খাত সরকারকে সহায়তা করতে পারে। সংলাপের আলোচকগণ মনে করেন জনসচেতনতা বাড়াতে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে আরও কঠোর ও কার্যকর পদ্ধতি নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে, সচেতনতা বাড়ানো ও ত্রাণ কার্যক্রমের বিস্তৃতি বাড়াতে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *