আমলাদের দৌরাত্ম নিয়ে আওয়ামী লীগের তোলপাড়

অনলাইন ডেস্কঃ

জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের পর এখন আমলা প্রসঙ্গ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই মনে করেন যে, একই রাজনৈতিক সরকারে আমলাদের দখলদারিত্ব এবং আধিপত্য কাম্য নয়। সূত্রঃ বাংলা ইনসাইডার।

দুঃখজনক হলেও সেটা সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের আরেক অংশ মনে করেন যে, আমলাদের সমালোচনা করা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করার নামান্তর। কাজেই যেটি প্রধানমন্ত্রী করছেন সেটি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক করা উচিৎ নয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের একটি তৃতীয় পক্ষও রয়েছেন। যারা মনে করছেন যে, আমলাদের এই উত্থান ঘটেছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার জন্য। মন্ত্রিসভায় ব্যবসায়ী এবং হাইব্রিডদের অনুপ্রবেশের কারণেই আমলারা সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এটি একটি যোগ্যতার লড়াই। এই তিন মতবাদের মধ্যে কোন মতবাদ শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবে সেটা পরের বিষয়। তবে আমলা প্রসঙ্গ নিয়ে এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম আলাপ-আলোচনা এবং মতপার্থক্য ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন যে ২০১৮ এর নির্বাচনের পরেই আমলাদের দৌরাত্ম্য সরকারের বেরেছে।

আর এই দৌরাত্ম্য বাড়ার জন্য তারা মনে করেন যে, আমলারা অতি ভক্তি দেখিয়ে সরকারের ভেতরে প্রবেশ করেছে এবং তারা সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। তোফায়েল আহমেদ যেমনটি সংসদে বলেছিলেন যে, ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্স অনুযায়ী একজন সচিবের ওপরে এমপি`র অবস্থান। সেই মতামতের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন অধিকাংশ এমপি। তারা মনে করেন যে, জেলার দায়িত্ব সচিবদের দেওয়ার ফলে জেলায় সংসদ সদস্যদের প্রভাব ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং এটি পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া জনপ্রতিনিধিদের একটি বড় অংশ মনে করেন যে, আমলারা এমন কিছু বাড়াবাড়ি করছেন যেটি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তিকে হুমকির মুখে ফেলছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, জেলা প্রশাসকরা যেভাবে জেলা ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন বা উন্নয়ন কর্মকান্ড করছেন সেখানে দলের কোনো ভূমিকা নেই। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা হচ্ছে যে, সবকিছু ডিসি সাহেব করছেন বা ইউএনও সাহেব করছেন। এটির ফলে জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় রাজনীতিতে রাজনীতিবিদরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন।

আওয়ামী লীগের আরেক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীও এ নিয়ে কথা বলেছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই এই মতের সাথে একমত। তারা মনে করেন যে, আমলাদেরকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। তবে এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিন্ন মতও আছে। আওয়ামী লীগের অন্তত দুজন নেতা প্রকাশ্যে আমলাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যদিও এই অবস্থানের কারণে দলে তারা সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু তাদের মতো যারা আছেন তারা মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী দেশ চালাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করবেন যে কাকে দিয়ে তিনি কাজগুলো করাবে। আমলাদের দিয়ে কাজ করাতে তিনি যদি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন তাহলে সেটি করাবেন। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু একজন রাজনৈতিক নেতা তিনি যখন সবকিছু করছেন। কাজেরই দেশে আমলাতন্ত্র কায়েম হয়েছে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।

তাদের এই মতামত অবশ্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে অধিকাংশ পর্যায়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং তারা যারা এইরকম মনোভাব পোষণ করছেন তাদের মনোভাবের সঙ্গে একমত নন আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি তৃতীয় মত রয়েছে। এই তৃতীয় মতে যারা আছেন তারা মনে করছেন যে, এখন যে সরকারে আমলাতন্ত্রের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেরেছে তার জন্য মন্ত্রীরাই দায়ী। বিশেষ করে ব্যবসায়ী এবং হাইব্রিডরা মন্ত্রী হওয়ায় তারা মন্ত্রণালয়গুলোতে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন না। আর সে কারণেই আমলারা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। এটি একটি দক্ষতার প্রতিযোগিতা বলে তারা মনে করেন। আর এই তিন মতামত নিয়ে আলাপ-আলোচনায় এখন লকডাউনের রাজনীতিকে ক্রমশ উত্তপ্ত করে তুলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *