অনলাইন ডেস্কঃ
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিন দিন ধরে তাঁকে বাড়তি অক্সিজেন দেওয়া লাগছে না।
শনিবার রাত সোয়া আটটার দিকে মুঠোফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসান আজিজুল হকের ছেলে ইমতিয়াজ হাসান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
ইমতিয়াজ হাসান বলেন, তাঁর বাবার বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন বেশ ভালো এসেছে। শরীরে যেসব মূল সমস্যা ছিল, সেগুলো ভালোর দিকে। লিভার, কিডনিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করছে কি না, এখন তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
ইমতিয়াজ হাসান আরও বলেন, তাঁর বাবা ছোট পরিসরে হৃদ্রোগে (হার্ট অ্যাটাক) আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এই সমস্যাও কমে আসছে। নিউমোনিয়া হয়েছিল। সেটিও ভালোর দিকে। সার্বিকভাবে বলা যায়, এখন তিনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। এ ছাড়া তিন দিন থেকে তাঁকে বাড়তি অক্সিজেন দেওয়াও লাগছে না।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এক মাস ধরে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক অসুস্থ হয়ে বাসায় ছিলেন। করোনার কারণে বাসায় রেখেই চলছিল তাঁর চিকিৎসা। বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও আগে থেকেই তাঁর হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা ও ডায়াবেটিস ছিল। শরীরে লবণের ঘাটতিও ছিল। অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাসাতেই তাঁর ইসিজি করানো হয়। তিনি একবার পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছিলেন। এক্স-রে পরীক্ষায় ওই স্থানে হাড়ে হালকা ফাটল ধরা পড়ে। এসব কারণে তিনি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন।
১৬ আগস্ট ইমতিয়াজ হাসান ফেসবুক প্রথমে তাঁর বাবার অসুস্থতার কথা প্রকাশ করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২১ আগস্ট এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়। তাঁকে প্রথমে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ওই দিন রাতে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন ২২ আগস্ট হাসপাতালটির ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ আরাফাতের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এই মেডিকেল বোর্ডের অধীনে হাসান আজিজুলের চিকিৎসা চলছে।
১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্ম নেন হাসান আজিজুল হক। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এরপর থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে নগরের চৌদ্দপায় এলাকার আবাসিকে বসবাস করে আসছেন।
সাহিত্যে অবদানের জন্য হাসান আজিজুল হক ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।